Popunder

ইসরাইল ইরানের কাছে আত্মসমর্পণ করবে

ইসরাইল ইরানের কাছে আত্মসমর্পণ করবে কি না, তা একটি জটিল এবং বহুস্তরীয় প্রশ্ন। দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্ক ইতিহাসে তীব্র বৈরিতার জন্য পরিচিত। তবে রাজনৈতিক বাস্তবতায় এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তার দৃষ্টিকোণ থেকে এটি অসম্ভব মনে হয় যে ইসরাইল ইরানের কাছে আত্মসমর্পণ করবে।

১. রাজনৈতিক এবং সামরিক শক্তি

ইসরাইল এবং ইরান দুইটি শক্তিশালী রাষ্ট্র হলেও, তাদের সামরিক ক্ষমতা এবং কৌশলগত অবস্থান ভিন্ন। ইসরাইলের কাছে অত্যাধুনিক সামরিক প্রযুক্তি রয়েছে, বিশেষত পারমাণবিক অস্ত্র এবং ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, যা তাকে আঞ্চলিক হুমকি মোকাবিলায় একটি শক্তিশালী অবস্থানে রাখে। ইরান, যদিও অনেক শক্তিশালী সামরিক বাহিনী ধারণ করে, তবে তার পারমাণবিক অস্ত্র বা আধুনিক যুদ্ধযন্ত্রের তুলনায় ইসরাইল অনেক এগিয়ে। অতএব, সামরিক দিক থেকে ইসরাইলের আত্মসমর্পণ একটি অসম্ভব সম্ভাবনা।

২. আঞ্চলিক প্রতিযোগিতা এবং বিরোধ

ইসরাইল ও ইরান একে অপরকে আঞ্চলিক প্রতিপক্ষ হিসেবে বিবেচনা করে। ইরান সিরিয়া, লেবানন এবং অন্য কিছু এলাকায় নিজেদের প্রভাব প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করছে, যা ইসরাইলের নিরাপত্তার জন্য হুমকি। অন্যদিকে, ইসরাইল ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচী এবং সন্ত্রাসী গ্রুপগুলির প্রতি সহানুভূতি দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন। এই রাজনৈতিক ও সামরিক বিরোধের মধ্যে, দু’পক্ষের মধ্যে আত্মসমর্পণ তো দূরের কথা, সমঝোতা বা শান্তি প্রতিষ্ঠা করাও কঠিন।

৩. আন্তর্জাতিক সমর্থন

ইসরাইলের জন্য আন্তর্জাতিক সমর্থন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের মতো বৃহৎ শক্তির কাছ থেকে। ইসরাইল আমেরিকার সাথে ঘনিষ্ঠ কূটনৈতিক এবং সামরিক সম্পর্ক বজায় রাখে, যা ইরানী হুমকি থেকে রক্ষা পেতে সাহায্য করে। ইরান, যদিও কিছু দেশ থেকে সমর্থন পায়, তবে পশ্চিমা দেশগুলির সাথে তার সম্পর্ক বেশিরভাগ সময়ই উত্তেজনাপূর্ণ থাকে। এই প্রেক্ষাপটে, ইসরাইলের কাছে আত্মসমর্পণ ইরানের জন্যও সামরিক ও কূটনৈতিকভাবে অসম্ভব।

৪. জাতিগত ও ধর্মীয় কারণ

ইসরাইল এবং ইরান উভয়ই তাদের নিজস্ব জাতিগত এবং ধর্মীয় পরিচয়ে অত্যন্ত গর্বিত। ইসরাইল একটি ইহুদী রাষ্ট্র এবং সেখানে ইহুদীদের জন্য বিশেষ রাজনৈতিক ও ধর্মীয় গুরুত্ব রয়েছে, যা তার আত্মসমর্পণকে আরও কঠিন করে তোলে। ইরান, যদিও শিয়া মুসলিম দেশ, তার শিয়া ইসলামী বিপ্লবের আদর্শ অনুযায়ী, অন্যান্য মুসলিম রাষ্ট্রের ওপর প্রভাব বিস্তার করতে চায়। এর মধ্যে দুই দেশের মধ্যে বিরোধের পেছনে ধর্মীয় এবং জাতীয় পরিচয়ের ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে।

. ভবিষ্যত প্রবণতা

অতীতে কিছু সময়ের জন্য উভয় দেশের মধ্যে অস্থায়ী শান্তির লক্ষণ দেখা গেছে, তবে এটি কখনোই দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচী এবং সন্ত্রাসী কার্যকলাপ নিয়ে আন্তর্জাতিক উদ্বেগ ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক আরও জটিল করে তোলে। ইসরাইলের কাছে আত্মসমর্পণ না করলেও, সম্ভবত তারা অন্য কূটনৈতিক বা সামরিক কৌশল অবলম্বন করবে যাতে ইরানকে প্রতিহত করা যায়।

উপসংহার

ইসরাইল ইরানের কাছে আত্মসমর্পণ করবে না, কারণ তা তার জাতীয় নিরাপত্তার জন্য বিপদজনক হতে পারে এবং আন্তর্জাতিক স্তরে তার কূটনৈতিক অবস্থানকে দুর্বল করে দেবে। সামরিক, কূটনৈতিক, এবং ধর্মীয় দিক থেকে এটি অত্যন্ত অসম্ভাব্য যে দুই দেশের মধ্যে আত্মসমর্পণের মতো কোন পরিস্থিতি তৈরি হবে। বরং, এটি সম্ভবত কূটনৈতিক সমাধান বা সামরিক উত্তেজনার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে।
Next Post Previous Post